সর্বোচ্চ আইকারী ১০ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ২০২৪
প্রতিটি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো কত কত দেশ কত কত মানুষ কতটা বড় জনগোষ্ঠীর ভালোলাগার কারণ হয়েছে চলচ্চিত্রটি নিদেনপক্ষে এরই উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে চলচ্চিত্র শিল্প।
আজকের ব্লগে ঢালিউড ইতিহাসের ব্যবসা সফল সেরা চলচ্চিত্রগুলো একত্রিত করা হয়েছে।F আজকে আপনাদের জানাবো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শীর্ষ থাকা ১০ টি সবচেয়ে বেশি আয় করা বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বিষয়ে।
পেজ সূচিপত্রঃ
- প্রিয়তমা ( ৪১.২৩ কোটি টাকা)
- বেদের মেয়ে জোসনা ( ২০ কোটি টাকা )
- স্বপ্নের ঠিকানা ( ১৯ কোটি টাকা )
- হাওয়া (১৬ কোটি টাকা )
- প্রিয়া আমার প্রিয়া ( ১৫ কোটি টাকা )
- পাসওয়ার্ড ( ১২ কোটি টাকা )
- সত্যের মৃত্যু নেই ( ১১ কোটি টাকা )
- শান্ত কেন মাস্তান ( ১০.৫ কোটি টাকা )
- আম্মাজান ( ১১ কোটি টাকা )
- পরান ( ১২ কোটি টাকা )
- সবশেষে লেখকের কথা
প্রিয়তমা ( ৪১.২৩ কোটি টাকা)
৪১.২৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিটির পরিচাল, চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক হিমেল আশরাফ। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় মুভি নির্দেশনা। ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে আরশাদ আদনান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটির গল্পকার ছিলেন প্রয়াত ফারুক হোসেন। হৃদয়বিদারক প্রেম কাহিনী নিয়ে বানানো এই মুভির নায়ক সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা শাকিব খান, এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার ছোট পর্দার অভিনেত্রী দীপিকা পাল।
২০২৩- এর ২৯ জুন প্রকাশের পর প্রথম সপ্তাহেই প্রিয়তমা আয় করে ১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশী সিনেমার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি সবচেয়ে দ্রুততম সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। এটি ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ আয়কৃত বাংলাদেশী চলচ্চত্র এবং সেই সঙ্গে সর্বকালেরও সর্বাধিক আয়কারী বাংলাদেশী মুভি। শুধু তাই নয় এখন পর্যন্ত শাকিব খানের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ বক্স অফিস রেকর্ড ধারী সিনেমা এটি। প্রিয়তমা ২২- তম বাংলাদেশ বিনোদন সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার এওয়ার্ডে বিশেষ সম্মান বিভাগে সেরা অভিনেতা এবং সেরা অভিনেত্রী সহ সর্বমোট নয়টি পুরস্কার জিতে নেয়।
বেদের মেয়ে জোসনা ( ২০ কোটি টাকা )
তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত এই মুভিটি বাংলাদেশের মুভি আর্কাইভের সেরা মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর গল্প নেওয়া হয়েছিল একই নামের অনেক পুরনো গ্রাম বাংলার নাটক থেকে। রাজপুত্রের ও বেদের মেয়ে প্রেম কাহিনীর এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ। ২০ লাখ টাকা বাজেটের এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালের ৯ জুন। ২০২৩ এর আগ পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ আয়কৃত চলচ্চিত্রের স্থানটি দখল করেছিল।
আরো পড়ুনঃ সেরা ৫ টি ড্রামা
ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে অনুসারে এটি বাংলাদেশের সেরা ১০ টি চলচিত্রের মধ্যে একটি। চলচ্চিত্রটির গানের অডিও ক্যাসেট মুক্তির এক মাসের মধ্য এক লাখ কপি বিক্রি হয়। হাসান মতিউর রহমানের লেখা ও মুজিব পরদেশীর গাওয়া আমি বন্দি কারাগারে , গানটি পরবর্তী কয়েক যুগ ধরে মানুষের মুখে শোনা যেত। এটি বাদে বাকি সবগুলো গান লিখেছিলেন পরিচালক তুজাম্মেল হক বকুল। এন্ড্রু কিশোর ও রুনা লায়লার গাওয়া বেদের মেয়ে জোসনা, গানটি আজও অমর হয়ে আছে।
স্বপ্নের ঠিকানা ( ১৯ কোটি টাকা )
এম এ খালেক পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি এখনো অনুপ্রাণিত করে কিংবদন্তির নায়ক সালমান শাহ এর বাকি মুভি গুলো দেখতে। নুরুল ইসলাম পারভেজ এর গল্প ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ গড়েছিলেন ছটকু আহমেদ। ১৯৯৫ এর ১১ মে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় সালমান শাহের নায়িকা ছিলেন শাবনূর ও সোনিয়া।
মুভিটি হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তথাকথিত ধনী-দরিদ্র পরিণয় এবং ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ভিত্তিক চরিত্রে একটি তৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেছিল। সালমান শাহ এর অভিনয় ছাড়া স্বপ্নের ঠিকানা এর বিশেষ দিক ছিল এর গান গুলো। এই দিন সেই দিন কোনদিন, সহ ছবির প্রায় সব কয়টি গান ছিল তখনকার সময়ে রেডিওর টপচারটে। গানগুলো পরিচালনা করেছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত নির্দেশক প্রয়াত আলম খান।
হাওয়া (১৬ কোটি টাকা )
করোনা মহামারী পরবর্তী সময় যে কাজগুলো দেশীয় সিনেমাকে পুনরায় তুলে ধরেছিল সেগুলোর মধ্যে এই হাওয়া একটি। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত এই রহস্য - নাটক ঘটনার সিনেমাটির প্রযোজনায় ছিল শান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচারস লিমিটেড। ছবিতে আকর্ষণীয় অভিনয় দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং উদীয়মান তারকা নাজিফা তুসি। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মন্ডল, নাসির উদ্দিন খান, এবং রিজভী রিজু।
আরো পড়ুনঃ সেরা ৫ টি ড্রামা
মাঝ সাগরে মাছ ধরার সময় এক দল জেলে তাদের মাছ ধরার জালে আবিষ্কার করে সুন্দর ও রহস্যময় এক তরুণীকে। আর এরপর থেকেই ঘটতে শুরু করে অদ্ভুত সব ঘটনা। এমন রোমাঞ্চকর পটভূমির সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০২২ সালের ২৯ জুলাই। ছবিটি বাংলাদেশের অস্কার কমিটি ৯৫ তম আস্কারের সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম, বিভাগের জন্য নির্বাচন করেছিল। এছাড়াও এটি স্থান পেয়েছিল ৮০ তম গোল্ডেন গ্লোব প্রতিযোগিতার শর্ট লিস্টে।
প্রিয়া আমার প্রিয়া ( ১৫ কোটি টাকা )
বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই ছবিটির মাধ্যমেই শুরু হয় শাকিব খানের আকাশ সম তারকা খ্যাতি অর্জন। ২০০৮ সালের ১৩ জুন মুক্তি পাওয়া এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন সাহারা। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য ছিল পুরী জগন্নাথের আর সংলাপ লিখেছিলেন শচীন নাগ।
আশা প্রোডাকশনের ব্যানারে বানানো ছবিটি মুক্তির বছর বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পায়। মুভিটি ২০০৮ সালের ঢালিউড বক্স অফিসে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। এর মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ উপার্জনকৃত মুভি গুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এমনকি ২০১৯ এর আগ পর্যন্ত এটি ছিল শাকিব খানের অভিনয় জীবনের সর্বোচ্চ আয়কৃত ছবি। শাকিব খান এই কাজের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার, এবং ইউরো সিজেএফবি পারফরমেন্স পুরস্কার জিতেছিলেন।
পাসওয়ার্ড ( ১২ কোটি টাকা )
২০১৯ সালে ইতিমধ্য শাকিব খানের তারকা খ্যাতি সবার ঊর্ধ্বে। এ বছরই পাঁচ জুন সারাদেশ জুড়ে ১৭৭ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার অভিনীত অ্যাকশন থ্রিলার পাসওয়ার্ড। মালেক আফসারী পরিচালিত চলচ্চিত্রটি এসকে ফিল্মসের ব্যানারে মোহাম্মদ ইকবালের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা করেন শাকিব খান নিজে। তার বিপরীতে এখানে অভিনয় করেছিলেন শবনম বুবলি। মুভি তে শাকিব খানকে দেখা যায় হ্যাক করা একটি ব্যাংক একাউন্টের পাসওয়ার্ড নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ভয়ংকর এক গ্যাংস্টারের সঙ্গে। এখানে সহ-অভিনয় শিল্পী হিসাবে ছিলেন ইমন ও মিশা সওদাগর।
আরো পড়ুনঃ সেরা ৫ টি ড্রামা
৩ কোটি টাকা ব্যায় বানানো সিনেমাটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহে তুলে নেয় ১১ কোটি টাকা। ফলে ২০১৯ সালের বাণিজ্যক চলচিত্রগুলোর সবগুলোকে টেক্কা দিয়ে প্রথম জায়গাটি পেয়ে যায় পাসওয়ার্ড। শুধু তাই নয়, মাত্র চার দিনে এটি দেশীয় মুভি শিল্পে চতুর্থ সর্বোচ্চ আইকারী সিনেমা হয়ে ওঠে। এরোই সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বকালের ব্যবসা সফল সিনেমার ট্যাগটাও যুক্ত হয়ে যায় মুভির নামের সঙ্গে। এমন কি সব থেকে বেশি আইকারি দেশি চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের নামটিও পাসওয়ার্ড। ভারত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এবং জনপ্রিয় অভিনেতা সহ মোট পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেছিল পাসওয়ার্ড।
সত্যের মৃত্যু নেই ( ১১ কোটি টাকা )
সেরা ব্যবসা সফল তালিকায় থাকা চলচ্চিত্রটিও সালমান শাহ অভিনীত। ১৯৯৬ সালে ছটকু আহাম্মেদ পরিচালিত সত্যের মৃত্যু নেই, সিনেমাটি। মুভিটির চিঠি এলো জেলখানাতে অনেকদিন পর, গানটি সারা দেশ জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই সিনেমাটি ১১ কোটির গন্ডি পেরোতে পেরেছিল।
শান্ত কেন মাস্তান ( ১০.৫ কোটি টাকা )
আম্মাজান সিনেমা মুক্তির আগের বছর মান্না অভিনীত এই ছবিটিও বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফলতা পায়। ১৯ ৯৮ সালের ৩১ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত এই ক্রাইম ফিল্মটির বাজেট ছিল ৯০ লাখ টাকা। পরিস্থিতির শিকার হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় জেলে যেতে হয় শান্ত নামে সাধারণ যুবকটিকে। সাজা শেষে জেল ফেরত ছেলের ঠাই হয় না নিজের বাড়িতেও। ফলে তাকে বেছে নিতে হয় অন্ধকার পথ। এমনি গল্প নিয়ে ছবির জন্য চিত্রনাট্য করেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু এবং স্বয়ং পরিচালক মনতাজুর রহমান।
আম্মাজান ( ১১ কোটি টাকা )
মনোয়ার হোসেন ডিপজল প্রযোজিত এই ক্রাইম ড্রামা ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন। কাজী হায়াত ও ডিপজল দুজনেই যৌথভাবে বানিয়েছিলেন সিনেমার চিত্রনাট্য। চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন মান্না, মৌসুমী সাবনাম ও আমিন খানের মতো জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীরা। প্রযোজক ডিপজল নিজেও ছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।
আম্মাজান গানের মাধ্যমে বাংলা মুভির গানের জগতে জনপ্রিয়তা পান রগ ব্যান্ডের মানুষ আইয়ুব বাচ্চু। ছবির সার্বিক সঙ্গীত আয়োজন করেছিলেন প্রয়াত গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এই অসামান্য কাজের জন্য কাজী হায়াত শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার এ সেরা চলচ্চিত্র এবং মান্নার সেরা অভিনেতার পুরস্কার সহ পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে আম্মাজান।
পরান ( ১২ কোটি টাকা )
দেশের সাময়িক এক সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই রোমান্টিক থ্রিলারটি নির্মাণ করেছিলেন তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফি। লাইভ টেকনোলজিসের অধীনে মুহাম্মদ তামজীদ উল আলম প্রযোজিত সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো শুরু হয় ২০২২ এর ১০ জুলাই থেকে। ত্রিকোণ প্রেমকে কেন্দ্র করে লোমহর্স হত্যাকাণ্ডের চলচ্চিত্রটি প্রধান চরিত্রে ছিলেন বৃদ্ধ সিনহা শাহা মিম, ইয়াস রোহান এবং শরিফুল রাজ।
সবশেষে লেখকের কথা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সর্বোচ্চ আয়কারি ১০ টি সিনেমা নিয়ে উপরে বর্ণিত আলোচনা করেছি। আশা করি এই পোস্টে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। অনলাইন ইনকাম, লাইফ স্টাইল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক নির্ভরযোগ্য আপডেট কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

.webp)
.webp)
ট্রিপজয়'প্যালসের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url